ঢাকা ০৭:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪, ৯ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বোয়ালখালীতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ  পোপাদিয়া শাখার শুকনা ইফতার বিতরন Logo বোয়ালখালীতে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ Logo কক্সবাজারগামী ট্রেনের ধাক্কায় বোয়ালখালীতে একজনের মৃত্যু Logo বোয়ালখালীতে ট্রাক উল্টে চালকের মৃত্যু Logo রাষ্ট্রপতির কাছে বিচার চাইলেন যৌন নিপীড়নের শিকার জবি শিক্ষার্থী মিম Logo নগরের প্রাণকেন্দ্রে নকল ওষুধের ডিপো! Logo ই-পাসপোর্টে আর থাকছে না স্বামী-স্ত্রীর নাম Logo সব জিআই পণ্যের তালিকা করার নির্দেশ হাইকোর্টের Logo এক বছরে ১ লাখ ২০ হাজার মাদক কারবারি গ্রেপ্তার Logo চট্টগ্রাম মহানগর কাপ্তাই রাস্তার মাথা কালুরঘাট টোকেন বাণিজ্য চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ
ই-পেপার দেখুন

দেশের প্রথম নারী ফুটবলার ও কোচ রেহানা পারভীন

  • বার্তা কক্ষ ::
  • আপডেট সময় ০৯:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৭৭ বার পঠিত

রেহানা পারভীন। বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই নারী একই সঙ্গে কাবাডি, হ্যান্ডবল ও ফুটবলে জাতীয় দলে খেলেছেন। কুড়িগ্রামে জন্ম নেয়া এ ক্রীড়াবিদ ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন বড় খেলোয়াড় হওয়ার। আজ তার স্বপ্ন ডানা মেলতে মেলতে আকাশ ছুঁয়েছে।

২০০৬ সালে রেহানার পারভীনের জাতীয় প্রতিযোগিতায় অভিষেক ঘটে। তখন প্রথম আন্তঃজেলা নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন শিপে ঢাকা জেলার পক্ষে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর নৈপুণ্যতায় ঢাকা প্রতিযোগিতা শিরোপা জয় করেছিল। তারপর কাবাডি এবং পরে বাংলাদেশ গেমসে হ্যান্ডবলেও চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁর দল। তিন খেলাতেই তার সমান দক্ষতার খবর ছড়িয়ে পড়ে, তাই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান সহজেই।

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ১০ম সাফ গেমসে মহিলা জাতীয় কাবাডি দলে খেলার সুযোগ আসে, এবং সেখানে তিনি তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। সাফ গেমস থেকে দেশে ফিরেই ডাক পান এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাইপর্ব ফুটবলে। ভারতে উড়িষ্যায় আমন্ত্রণমূলক মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাফুফে একাদশের হয়ে ৭ টি প্রদেশে খেলেন তিনি। সেখানেও দুটি ম্যাচে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান। ২০১২ সালে ভারতের পাটনায় অনুষ্ঠিত প্রথম মহিলা বিশ্বকাপ কাবাডিতে তিনি বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। ফিফা এম এ এলিট রেফারিস কোর্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। এছাড়াও কোচের স্বীকৃতি হিসেবে এএফসি ‘ সি’ লাইসেন্স আছে তাঁর। ভলিবল কোচেস কোর্সও করেছেন তিনি।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি আনসার সেবাপদক গ্রহণ করেন রেহানা পারভীন।

কথা হয়েছিলো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এই কৃতি ক্রীড়াবিদের সঙ্গে…
প্রশ্নঃ কেমন আছেন?
রেহানা পারভীনঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তবে এই করোনা সময়ে সবকিছু থেমে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা খারাপলাগা কাজ করছে।

প্রশ্নঃ আপনার ফুটবলে আসার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই, জানাতে চাই পাঠককে?
রেহানা পারভীনঃ ছেলেবেলায় আমি ছিলাম ভীষণ দূরন্ত। খেলাধুলার পাশাপাশি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। লুকিয়ে লুকিয়ে বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেলও চালিয়েছি। প্রতিবেশীরা বিষয়টি সহজভাবে নিতো না, তবে আমি এগুলো পাত্তা দিতাম না। স্কুল কলেজে খেলাধুলায় বেশ নামডাক হয়। তারপর আন্তঃজেলা মহিলা ফুটবল দিয়েই শুরু। প্রথম যখন ডাক এলো, তখন মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তোমাদের সাথে কি পুরুষ কোচ যাবে, নাকি মহিলা যাবে, তখন আমি বলেছি পুরুষ এবং মহিলা দু’জনই যাবেন। তখন মা একটু আপত্তি জানিয়েছিলেন। আসলে তখনও তো এখনকার মতো এতটা মেয়েদের বাইরে খেলাধুলার ব্যাপারে স্বীকৃতি ছিলো না।

প্রশ্নঃ দেশের খেলাধুলায় মেয়েরা তেমনভাবে এগুতে পারছেন না কেনো?
রেহানা পারভীনঃ দেখেন, মেয়েরা কোনোদিক দিয়েই পিছিয়ে নেই। এখন কিন্তু দেশের মহিলা ফুটবল এগিয়ে। ভালোমতো যত্ন ও সুযোগ সুবিধা পেলে আরও উন্নয়ন হবে। ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনার জন্য যোগ্য ও দক্ষ লোকের প্রয়োজন রয়েছে, এদিকটায় মনোযোগ দিতে হবে। মেধাবী সংগঠকের অভাবেও আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগুতে পারছি না।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে আসার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা কি বলে আপনি মনে করেন?
রেহানা পারভীনঃ নারীরা সুযোগ সুবিধা কম পায়, দেশের মাটিতে মেয়েদের নিয়ে বেশি বেশি টুর্নামেন্ট হলে তারা নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারতো। মেয়েদের ফুটবলে না আসার কারণ আমি মনে করি তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় কম। যদি তাদের পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিকটা ভালো হতো, তারা বাবা মায়ের হাতে নিজেদের ভালো মানের আয়টা তুলে দিতে পারতো, তখন দেখতেন, অভিভাবকরাও আগ্রহী হতেন তাদের মেয়েদের এখানে পাঠাতে। তবে দিন দিন আমরা আশার আলো দেখছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। তিনি আমাদের প্রতি নজর দিয়েছেন, সামনে দেশের ফুটবলে নারীরা অসামান্য অর্জন দেখাতে সক্ষম।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কেনো আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ার তৈরি হচ্ছে না, এর মূল কারণ কি?
রেহানা পারভীনঃ আগেও বলেছি, মেধাবী সংগঠক, দক্ষ পরিচালক এবং নারী ফুটবলারদের প্রতি সুনজর দিতে হবে, বেশি বেশি করে টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে, তাহলে আমাদের ফুটবলেও আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ার তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্নঃ কোচ হিসেবে আপনি কি কখনো কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছেন?
রেহানা পারভীনঃ অনেকে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়েই নানা কথা শোনাতো, আমি পাত্তা দিতাম না, আর এই পাত্তা না দেয়াটাই আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের উন্নতির জন্য আমাদের আর কি কি বিষয়ে কাজ করা উচিত?
রেহানা পারভীনঃ মেয়েদের প্রাকটিসগুলো ঠিকমতো করানো, বেশি বেশি টুর্নামেন্ট খেলার সু্যোগ, মানসম্মত ক্রীড়া সংগঠক- এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

প্রশ্নঃ রেহানা স্পোর্টস একাডেমি করেছেন আপনার এলাকায়। এই একাডেমি নিয়ে কি ভাবছেন?
রেহানা পারভীনঃ থানা ও জেলা পর্যায়ে ছেলে মেয়েদের প্রাকটিস চলছে। আমার নিজস্ব অর্থায়নে রেহানা স্পোর্টস একাডেমির কার্যক্রম চলছে। আসলে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে কোনো কিছুতে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বা সহযোগিতা পেলে হত-দরিদ্র এলাকা থেকে খেলোয়াড় তুলে আনা সম্ভব।

প্রশ্নঃ আপনার প্লেয়ার জীবনে এমন একটা স্মরনীয় ঘটনা যা মনে হলে আপনি ইমোশনাল হয়ে যান?
রেহানা পারভীনঃ ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আনসার সেবাপদক গ্রহণ। এটা সত্যি আমার জীবনের একটা বিশাল পাওয়া। আরেকবার দিল্লিতে খেলতে যাবার সময় বিমানে উঠেই মায়ের কথা মনে পড়ায় কেঁদেছিলাম ,কারণ মা ছোটবেলায় প্রায়ই বলতেন, ” এত যে খেলা খেলা করিস, তুই কি দিল্লি যাবি?” সত্যি যখন দিল্লি যাচ্ছি, তখন আর মা বেঁচে নেই। মা বেঁচে থাকলে কতই খুশি হতেন!

প্রশ্নঃ বর্তমান সময়ের মহিলা ফুটবলারদের উদ্দেশ্যেে কিছু বলেন…
রেহানা পারভীনঃ এখন মহিলা ফুটবলাররা এগিয়ে যাচ্ছে। ওরা ভালো করছে। আমরা হয়তো কিছু পাইনি, কিন্তু নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু পাচ্ছে যেমন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মান এবং সম্মানী পাচ্ছে, এতে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। সামনে আমাদের নারী ফুটবলাররা আরও এগিয়ে যাবে আমার বিশ্বাস এবং আস্থাও আছে। আমাদেরসময় অনেক বাঁধা ছিলো মেয়েদের, তাই মেয়েরা খেলাধুলায় আসবে এটা ছিলো অনেকটাই যুদ্ধের মতো। এখন সময় বদলে গেছে, এখন অনেকেই আসছে সানন্দে….. মন দিয়ে খেললে তোমরাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করবে ইনশাআল্লা।

ট্যাগস :

আপনার মতামত লিখুন

বোয়ালখালীতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ  পোপাদিয়া শাখার শুকনা ইফতার বিতরন

দেশের প্রথম নারী ফুটবলার ও কোচ রেহানা পারভীন

আপডেট সময় ০৯:০০:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ অগাস্ট ২০২১

রেহানা পারভীন। বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই নারী একই সঙ্গে কাবাডি, হ্যান্ডবল ও ফুটবলে জাতীয় দলে খেলেছেন। কুড়িগ্রামে জন্ম নেয়া এ ক্রীড়াবিদ ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন বড় খেলোয়াড় হওয়ার। আজ তার স্বপ্ন ডানা মেলতে মেলতে আকাশ ছুঁয়েছে।

২০০৬ সালে রেহানার পারভীনের জাতীয় প্রতিযোগিতায় অভিষেক ঘটে। তখন প্রথম আন্তঃজেলা নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ন শিপে ঢাকা জেলার পক্ষে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর নৈপুণ্যতায় ঢাকা প্রতিযোগিতা শিরোপা জয় করেছিল। তারপর কাবাডি এবং পরে বাংলাদেশ গেমসে হ্যান্ডবলেও চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁর দল। তিন খেলাতেই তার সমান দক্ষতার খবর ছড়িয়ে পড়ে, তাই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান সহজেই।

২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ১০ম সাফ গেমসে মহিলা জাতীয় কাবাডি দলে খেলার সুযোগ আসে, এবং সেখানে তিনি তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। সাফ গেমস থেকে দেশে ফিরেই ডাক পান এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাইপর্ব ফুটবলে। ভারতে উড়িষ্যায় আমন্ত্রণমূলক মহিলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাফুফে একাদশের হয়ে ৭ টি প্রদেশে খেলেন তিনি। সেখানেও দুটি ম্যাচে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পান। ২০১২ সালে ভারতের পাটনায় অনুষ্ঠিত প্রথম মহিলা বিশ্বকাপ কাবাডিতে তিনি বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। ফিফা এম এ এলিট রেফারিস কোর্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। এছাড়াও কোচের স্বীকৃতি হিসেবে এএফসি ‘ সি’ লাইসেন্স আছে তাঁর। ভলিবল কোচেস কোর্সও করেছেন তিনি।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি আনসার সেবাপদক গ্রহণ করেন রেহানা পারভীন।

কথা হয়েছিলো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এই কৃতি ক্রীড়াবিদের সঙ্গে…
প্রশ্নঃ কেমন আছেন?
রেহানা পারভীনঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তবে এই করোনা সময়ে সবকিছু থেমে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা খারাপলাগা কাজ করছে।

প্রশ্নঃ আপনার ফুটবলে আসার শুরুর গল্পটা শুনতে চাই, জানাতে চাই পাঠককে?
রেহানা পারভীনঃ ছেলেবেলায় আমি ছিলাম ভীষণ দূরন্ত। খেলাধুলার পাশাপাশি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। লুকিয়ে লুকিয়ে বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেলও চালিয়েছি। প্রতিবেশীরা বিষয়টি সহজভাবে নিতো না, তবে আমি এগুলো পাত্তা দিতাম না। স্কুল কলেজে খেলাধুলায় বেশ নামডাক হয়। তারপর আন্তঃজেলা মহিলা ফুটবল দিয়েই শুরু। প্রথম যখন ডাক এলো, তখন মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তোমাদের সাথে কি পুরুষ কোচ যাবে, নাকি মহিলা যাবে, তখন আমি বলেছি পুরুষ এবং মহিলা দু’জনই যাবেন। তখন মা একটু আপত্তি জানিয়েছিলেন। আসলে তখনও তো এখনকার মতো এতটা মেয়েদের বাইরে খেলাধুলার ব্যাপারে স্বীকৃতি ছিলো না।

প্রশ্নঃ দেশের খেলাধুলায় মেয়েরা তেমনভাবে এগুতে পারছেন না কেনো?
রেহানা পারভীনঃ দেখেন, মেয়েরা কোনোদিক দিয়েই পিছিয়ে নেই। এখন কিন্তু দেশের মহিলা ফুটবল এগিয়ে। ভালোমতো যত্ন ও সুযোগ সুবিধা পেলে আরও উন্নয়ন হবে। ক্রীড়াঙ্গন পরিচালনার জন্য যোগ্য ও দক্ষ লোকের প্রয়োজন রয়েছে, এদিকটায় মনোযোগ দিতে হবে। মেধাবী সংগঠকের অভাবেও আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগুতে পারছি না।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে আসার পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা কি বলে আপনি মনে করেন?
রেহানা পারভীনঃ নারীরা সুযোগ সুবিধা কম পায়, দেশের মাটিতে মেয়েদের নিয়ে বেশি বেশি টুর্নামেন্ট হলে তারা নিজেদের ঝালিয়ে নিতে পারতো। মেয়েদের ফুটবলে না আসার কারণ আমি মনে করি তাদেরকে মূল্যায়ন করা হয় কম। যদি তাদের পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিকটা ভালো হতো, তারা বাবা মায়ের হাতে নিজেদের ভালো মানের আয়টা তুলে দিতে পারতো, তখন দেখতেন, অভিভাবকরাও আগ্রহী হতেন তাদের মেয়েদের এখানে পাঠাতে। তবে দিন দিন আমরা আশার আলো দেখছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। তিনি আমাদের প্রতি নজর দিয়েছেন, সামনে দেশের ফুটবলে নারীরা অসামান্য অর্জন দেখাতে সক্ষম।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কেনো আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ার তৈরি হচ্ছে না, এর মূল কারণ কি?
রেহানা পারভীনঃ আগেও বলেছি, মেধাবী সংগঠক, দক্ষ পরিচালক এবং নারী ফুটবলারদের প্রতি সুনজর দিতে হবে, বেশি বেশি করে টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে, তাহলে আমাদের ফুটবলেও আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ার তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্নঃ কোচ হিসেবে আপনি কি কখনো কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয়েছেন?
রেহানা পারভীনঃ অনেকে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়েই নানা কথা শোনাতো, আমি পাত্তা দিতাম না, আর এই পাত্তা না দেয়াটাই আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের উন্নতির জন্য আমাদের আর কি কি বিষয়ে কাজ করা উচিত?
রেহানা পারভীনঃ মেয়েদের প্রাকটিসগুলো ঠিকমতো করানো, বেশি বেশি টুর্নামেন্ট খেলার সু্যোগ, মানসম্মত ক্রীড়া সংগঠক- এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

প্রশ্নঃ রেহানা স্পোর্টস একাডেমি করেছেন আপনার এলাকায়। এই একাডেমি নিয়ে কি ভাবছেন?
রেহানা পারভীনঃ থানা ও জেলা পর্যায়ে ছেলে মেয়েদের প্রাকটিস চলছে। আমার নিজস্ব অর্থায়নে রেহানা স্পোর্টস একাডেমির কার্যক্রম চলছে। আসলে পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে কোনো কিছুতে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বা সহযোগিতা পেলে হত-দরিদ্র এলাকা থেকে খেলোয়াড় তুলে আনা সম্ভব।

প্রশ্নঃ আপনার প্লেয়ার জীবনে এমন একটা স্মরনীয় ঘটনা যা মনে হলে আপনি ইমোশনাল হয়ে যান?
রেহানা পারভীনঃ ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে আনসার সেবাপদক গ্রহণ। এটা সত্যি আমার জীবনের একটা বিশাল পাওয়া। আরেকবার দিল্লিতে খেলতে যাবার সময় বিমানে উঠেই মায়ের কথা মনে পড়ায় কেঁদেছিলাম ,কারণ মা ছোটবেলায় প্রায়ই বলতেন, ” এত যে খেলা খেলা করিস, তুই কি দিল্লি যাবি?” সত্যি যখন দিল্লি যাচ্ছি, তখন আর মা বেঁচে নেই। মা বেঁচে থাকলে কতই খুশি হতেন!

প্রশ্নঃ বর্তমান সময়ের মহিলা ফুটবলারদের উদ্দেশ্যেে কিছু বলেন…
রেহানা পারভীনঃ এখন মহিলা ফুটবলাররা এগিয়ে যাচ্ছে। ওরা ভালো করছে। আমরা হয়তো কিছু পাইনি, কিন্তু নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু পাচ্ছে যেমন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মান এবং সম্মানী পাচ্ছে, এতে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। সামনে আমাদের নারী ফুটবলাররা আরও এগিয়ে যাবে আমার বিশ্বাস এবং আস্থাও আছে। আমাদেরসময় অনেক বাঁধা ছিলো মেয়েদের, তাই মেয়েরা খেলাধুলায় আসবে এটা ছিলো অনেকটাই যুদ্ধের মতো। এখন সময় বদলে গেছে, এখন অনেকেই আসছে সানন্দে….. মন দিয়ে খেললে তোমরাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করবে ইনশাআল্লা।