কালেরপত্র ডেষ্ক :
খাদ্য ঘাটতির দেশে দানাদার খাদ্যে এসেছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা । কৃষিপণ্যের রফতানি ছুঁয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক। তবে এ সাফল্য কৃষিখাতের প্রারম্ভিক সাফল্য।
এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতি-সহায়তা বৃদ্ধি ও কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে কৃষিখাত আরও এগিয়ে যাবে। বিশ্ব কৃষির বাজারে প্রথমসারির দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনা : আগামীর চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এমন সম্ভাবনার কথা বলেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি জসিম উদ্দিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী এবং কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
মূল প্রবন্ধে ড. আতিউর রহমান বলেন, দেশের কৃষিতে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও দুই হাজার ১০০ ফসলের জাত উদ্ভাবিত হবে। কৃষি উন্নয়ন ব্যয় চারগুণ বেড়ে হবে ৪৩৮ বিলিয়ন ডলার। এ সময় দেশের কৃষির উৎপাদনের পাশাপাশি বেড়ে যাবে মজুরি ও মুনাফা।
তিনি বলেন, কৃষিতে অর্থায়ন ও প্রযুক্তি বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ৫০০ কোটি টাকার স্ট্যার্টঅ্যাপ বিজনেস ফান্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেসরকারি ব্যাংক এতে সমপরিমাণ অর্থ নিয়ে ১ শতাংশ সুদে সহায়তা দেবে। সে ক্ষেত্রে কৃষি উদ্যোক্তাদের এ ঋণের বড় অংশের ব্যবস্থা করা দরকার।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা। সেজন্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে আরও এগিয়ে নেয়ার বিকল্প নেই। দেশে কৃষিশিল্প গড়তে ১ থেকে ২ শতাংশ সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আরও কিছু বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।
তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামীতে কাজ করতে হবে। দেশে-বিদেশে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মার্কেট বড় না হলে কোনোভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, আমাদের কৃষিকে রূপান্তর করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে কিছু আইন-কানুন বদলাতে হতে পারে। রফতানিমুখী অর্থনীতি তৈরির জন্য কৃষিখাতকে এগিয়ে নেয়ার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, শিল্পনীতি, কৃষিনীতিতে নানা সুযোগ সুবিধা কীভাবে বাড়ানো যায় সে প্রস্তাব দিন। আমরা সব সহায়তা দেব। বর্তমান সরকার এটি বিশ্বাস করে যে কৃষির উন্নয়ন ছাড়া স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়।
প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম আরও বলেন, কৃষির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমাদের আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। এটি সূচনা মাত্র। তার জন্য সরকার সব সহায়তা দেবে।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, কৃষিখাতে বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের প্রয়োজনে আমাদের যেসব সুবিধা প্রয়োজন সেটার প্রস্তাব আমরা দেব। স্বল্প সুদে ঋণ এবং দরিদ্র ও অতিদরিদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ এবং প্রণোদনা সহায়তা বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমরা বসবো।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্রদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম। তারা তাদের নির্ধারিত ঋণের বড় অংশ বড় খাতগুলোকে দিচ্ছে। কৃষিতে কম দিচ্ছে। কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সবাইকে তারা সহায়তা করুক। সে তাগিদ দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ-এর চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, দেশে করোনার সময় খাদ্যের যে জোগান কৃষক অব্যাহত রেখেছে, তার জন্য তারা প্রশংসার দাবিদার।
তিনি বলেন, একই সময় কৃষিতে সরকারের মনোযোগ, আগ্রহ ও সহযোগিতার জোগানও প্রশংসার। এভাবে সহায়তা অব্যাহত থাকলে আমরা আগামীতে দেশকে আরও এগিয়ে নেব। আমাদের কৃষক, ভালো কৃষক। তারা উৎপাদনশীলতায় নেদারল্যান্ডসের মতো উন্নত কৃষি উৎপাদনকারীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমরা কৃষি রফতানিতে ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছি। এ সাফল্য শেষ নয়, শুরু। সরকারের নীতি-সহায়তা বৃদ্ধি ও কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে এ কৃষিখাত আরও এগিয়ে যাবে। বিশ্ব কৃষির বাজারে প্রথমসারির দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিন, তাহলে দেশে প্রাণ-এর মতো অসংখ্য কোম্পানি জন্ম নেবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বাত্মক সহায়তা করলে সেটা সম্ভব। সেজন্য একসঙ্গে কাজ করতে চাই। কিন্তু নানা জটিলতায় ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
শাইখ সিরাজ বলেন, বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কৃষির উন্নতি করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাতে সরকারকে বিনিয়োগের জায়গাটাতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থান উন্নত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যেরও একটি প্রচণ্ড শক্তিশালী জায়গা রয়েছে। সেখানে আমাদের পৌঁছাতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের কৃষক ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় অনেক ভালো রয়েছে। দেশের ৬০ শতাংশ অর্থনীতি তাদের ওপর নির্ভর করছে। কৃষকের মেয়ে গার্মেন্টসে কাজ করছে, আর ছেলে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, কৃষিখাতে ব্যক্তি উদ্যোগ অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। যারা বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান গড়েছেন, কৃষিকে প্রক্রিয়াজাত শিল্পে রূপ দিয়েছেন, তাদের সহায়তা দিতে হবে।