ঢাকা ০৫:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo চট্টগ্রাম বোয়ালখালীর দুই শিক্ষার্থীর, সাঁতারে জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব অর্জন Logo ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের ২য় ‘ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয় Logo বোয়ালখালীতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন Logo সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের দুই মাসের জন্য নির্বাহী Logo সাবেক এমপি মইন উদ্দীন খান বাদলের কবরে হামলা, ভাংচুর Logo আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করলেন ড. ইউনূস Logo চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বন্দর থানায় কর্মরত এক পুলিশ সদস্যকে বেধড়ক পিটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। Logo ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের সবাইকে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ Logo অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায়: সেনাপ্রধান Logo বোয়ালখালীতে স্কাউটস সদস্যদের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান
ই-পেপার দেখুন

বঙ্গবন্ধুর ক্যানভাসে উদ্ভাসিত অনন্য এক বাংলাদেশ

  • বার্তা কক্ষ ::
  • আপডেট সময় ০৮:৫১:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ অগাস্ট ২০২১
  • ৯৯৩ বার পঠিত

ড. আতিউর রহমা

‘ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’
কবি শামসুর রাহমানের এই পুরুষ এক ‘দিঘল পুরুষ’। কবির ভাষায় তাঁর ‘নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া।’ তিনি আরো লিখেছেন ‘যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয়/জ্যোত্স্নার সারস।’ কেননা তিনিই যে বাংলাদেশের আরেক নাম। তিনি বাঙালি জাতির পিতা। মানুষ ভালোবেসে তাঁকে জন-উপাধি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু। এই নাম এখন সর্বদাই ‘স্বতোৎসারিত’। কবি মহাদেব সাহার কথাই ঠিক, ‘লিখি বা না লিখি শেখ মুজিব বাংলা ভাষায় প্রতিটি নতুন কবিতা।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘মুজিব গোলাপ হয়ে ফোটে, লাল পদ্ম হয়ে ফোটে হৃদয়ে হৃদয়ে।’ কেউ চাইলেই কি সেই হৃদয়কে অস্বীকারের উপায় আছে? তিনি যে রয়েছেন সর্বত্র।
তিনি তাঁর নান্দনিক নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশের ও বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মুক্তি ও উন্নয়নের সংগ্রামে ভরসার ছায়া হয়ে আছেন। সংগ্রামী এই রাজনৈতিক শিল্পীর ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয়ে আছে বাংলাদেশ নামক এক রঙিন মানচিত্র। এই শিল্পীর ক্যানভাসে লেপ্টে আছে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, মুক্তিসংগ্রাম ও দরদি নেতৃত্বের অসামান্য সব প্রতিচ্ছবি। একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। দেশটিকে কী করে সমৃদ্ধ ও জনবান্ধব করা যায় সেই অর্থনৈতিক মুক্তিসংগ্রামেও তিনি ছিলেন অবিচল। আর তাই অল্প সময়ের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছিল। ছিল খাদ্যাভাব। ছিল দারিদ্র্য। ছিল দুর্নীতি। কিন্তু তিনি পুরো সমাজের ও প্রশাসনের খোল-নলচে বদলে দেওয়ার আমূল সংস্কারবাদী সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। নয়া ব্যবস্থায় খাদ্যোৎপাদন বাড়ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম এবং পাশাপাশি তেল ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। তাই খাদ্যসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম হয়ে উঠেছিল আকাশছোঁয়া। ঘাটতির অর্থনীতিতে চোরাকারবারি, মজুদদার ও দুর্নীতিবাজরা ছিল সক্রিয়। আর উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পাকিস্তানি নষ্ট কূটনীতিতে প্রভাবিত বিশ্ব মোড়লদের একাংশের খাদ্য সাহায্যকে ঘিরে চলছিল ভয়ংকর সব ভূরাজনৈতিক খেলা। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু ঘরে ও বাইরে সাহসের সঙ্গে তাঁর গণমুখী রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতি সচল রেখেছিলেন। বিচক্ষণ মুদ্রানীতি, ডিমনিটাইজেশন, খাদ্য ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে তাঁর শাসনামলের শেষ দিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।
তবে দলের ও দেশের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা মীরজাফরদের শিরোমণি ছিলেন খন্দকার মোশতাক। এ ছাড়া অন্য বয়োজ্যষ্ঠ রাজনীতিকরাও বিপ্লবোত্তর একটি দেশের পুনর্নির্মাণে সহযোগিতার বদলে সর্বক্ষণ সমালোচনাই করছিলেন। অস্থির তরুণদের আরো অস্থির করে তুলছিলেন। আর আমলাতন্ত্র ও সামরিক বাহিনীর অন্দরমহলে তো চলছিল ষড়যন্ত্রের নানা কসরত। এমন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী রূপান্তরবাদী নেতৃত্বের গুণে দেশ দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন তিনি। কৃষি উন্নয়নের জন্য বীজ, সার ও ঋণ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন দ্রুত। কৃষকদের ছাড়াও নগরের বেশির ভাগ মানুষের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দাঁড় করাতে তিনি ছিলেন খুবই তৎপর। প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ ছাড়াও গ্রামগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে অগ্রাধিকার দেন। আর নিজ নিজ ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার দিয়ে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার না করার নীতি গ্রহণ করেন। সমাজের ভেতরে সাম্প্রদায়িকতার কারণে যাতে শান্তি বিনষ্ট না হয় সে জন্যই তিনি এই উদারনীতি গ্রহণ করেছিলেন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন সম্প্রতি এলএসইতে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বলেছেন যে শুধু এই নীতির কারণেই বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু হওয়ার অধিকার রাখেন। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি শিক্ষা কমিশন, ইউজিসি স্থাপনসহ অনেক সংস্কারধর্মী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিতে ২৪ শতাংশ বিনিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষা খাতে ৭.১ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছিলেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছিলেন। সব ধরনের অবকাঠামো পুনর্বাসনে অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। সারা দুনিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি ছিলেন খুবই তৎপর।
আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে এ দেশেরই কিছু ক্ষমতালোভী কুসন্তান-পিশাচ বাঙালির মুক্তির এই মহানায়ককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ওরা ভেবেছিল এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে চিরদিনের জন্য তাঁকে মুছে ফেলা যাবে। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন আমাদের নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে। তিনি চিরজাগ্রত আমাদের গল্পে, কবিতায়, শিল্পীর তুলির আঁচড়ে। আছেন তিনি বাংলাদেশের অসংখ্য নদীর স্রোতোধারায়, পাখির ডাকে, রবীন্দ্রনাথের গানে, নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় আর বিশাল সবুজ প্রান্তরে। দিন দিন তিনি আরো বড় হচ্ছেন। বিরাট হচ্ছেন। ব্যাপক হচ্ছেন। তিনি আছেন, থাকবেন চিরদিন বাংলাদেশের এবং সারা বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের স্বপ্নপূরণের ভরসার প্রতীক হিসেবে।
আর সে কারণেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এত আগ্রহ। আমার ধারণা, পৃথিবীর আর কোনো জাতির পিতা ও রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে এত কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লেখা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে এত লেখালেখি হয়েছে, যা এককথায় কল্পনাতীত। হয়তো কালের কষ্টিপাথরে এসব লেখার অনেকাংশই ঝরে পড়বে। তার পরও এ কথা ঠিক যে অনেক লেখাই কালোত্তীর্ণ হবে। হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা ও গবেষণানির্ভর লেখাগুলো নিশ্চয় যুগ যুগ ধরে পাঠকের মনে বাসা বাঁধবে। আমাদের সমাজের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ও পণ্ডিত যাঁরা, তাঁরা যদি একটু কষ্ট করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরো লেখেন, তাহলে তরুণ প্রজন্ম খুবই অনুপ্রাণিত হয়। আমরা যেন আমাদের বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহনেতাদের নিয়ে আরো নিবিড়ভাবে গবেষণা করি। মুক্তিযুদ্ধের মানুষ ও স্বপ্ন নিয়ে অনেক গভীর গবেষণার সুযোগ কিন্তু আমাদের আশপাশেই রয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিরল প্রজন্ম যত দিন বেঁচে আছে তত দিন তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে এ দেশের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিপুল সুযোগ রয়েছে। বলতে ভালো লাগছে যে ইউজিসি এরই মধ্যে সব উচ্চ শিক্ষালয়ে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোর্স চালু করেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর তারুণ্য ও শিক্ষাভাবনা নিয়ে দুটি বিস্তৃত গবেষণা পরিচালনারও উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবেই সব উচ্চ শিক্ষালয়কে নিজেদের ইতিহাস ও নেতৃত্বকে জানার এবং বোঝার জন্য ব্যাপকভাবে গবেষণা ও প্রাণবান পাঠক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে।
নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর জীবন, তাঁর চিন্তা ও কর্ম তরুণ প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর থেকে শুরু করে কলকাতা ও ঢাকায় তাঁর ছাত্রজীবন এবং নেতৃত্বের ইতিহাস আমাদের তরুণদের উৎসাহিত করবে। তরুণ বয়সেই ভাষা-প্রশ্নকে রাজনৈতিক সংগ্রামের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন এটি দেশমাতৃকার প্রতি তাঁর একনিষ্ঠতার পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের বিরোধিতার জায়গা থেকে নিজ দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে তিনি উদার ধর্মনিরপেক্ষ প্রধানতম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। তাঁর এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাই পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে তিনি প্রতিফলিত করেছিলেন। শুরু থেকেই তাঁর এমন অসাম্প্রদায়িক অবস্থান আগামী প্রজন্মগুলোকেও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে উৎসাহিত করবে।
স্বাধীনতা-পূর্বকালে অর্থনীতি তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর গভীর চিন্তা এবং এ দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ও চাহিদার প্রতি বঙ্গবন্ধুর সংবেদনশীলতার সবচেয়ে বড় নিদর্শন তাঁর ছয় দফা কর্মসূচি। উন্নয়নের সুফল সবার কাছে, বিশেষত প্রান্তে থাকা নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে না পারলে তা যে বৃথা হয়ে যায়, তা তিনি জানতেন। তাই অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণকে কেন্দ্রে রেখে ছয় দফা কর্মসূচি সামনে নিয়ে এসেছিলেন বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে। এই কর্মসূচি পুরো দলকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি পূর্ববাংলার শ্রমিক কৃষক-সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পায়। আজকের তরুণরাও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিয়ে ভাবার সময় ছয় দফার পেছনে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ও এটি বাস্তবায়নে তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তা থেকে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
ছয় দফার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্যই বঙ্গবন্ধু ১৯৭০-এ নির্বাচন করেছিলেন। জয়ী হয়ে খসড়া শাসনতন্ত্র তৈরির কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানিরা তা মেনে নিতে পারেনি। তাই বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। তার আগেই বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন আর সবাইকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। প্রকৃত অর্থেই গণমুখী নেতা ছিলেন বলেই তাঁর আহ্বানে দল-মত-ধর্ম-নির্বিশেষে পুরো জাতি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়।
স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু স্বভাবতই সবাইকে নিয়ে কল্যাণমুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের অভিযাত্রা যদি অপশক্তিগুলো থমকে না দিত, তাহলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম তা কল্পনা করাও কঠিন! তবু সান্ত্বনা এই যে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম শেষে ফের দেশ ফিরেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে। বিশ্ব মহামারি ও মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে সাহসের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে। চ্যালেঞ্জ প্রচুর সামনে। তবু আমরা এই কারণে আশাবাদী যে প্রতিকূল পরিবেশকে বাগে এনে এগিয়ে চলার সংস্কৃতিকে পাথেয় করে নিশ্চয় পৌঁছে যেতে পারব আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
বঙ্গবন্ধুর আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।

ট্যাগস :

আপনার মতামত লিখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রাম বোয়ালখালীর দুই শিক্ষার্থীর, সাঁতারে জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব অর্জন

বঙ্গবন্ধুর ক্যানভাসে উদ্ভাসিত অনন্য এক বাংলাদেশ

আপডেট সময় ০৮:৫১:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ অগাস্ট ২০২১

ড. আতিউর রহমা

‘ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।’
কবি শামসুর রাহমানের এই পুরুষ এক ‘দিঘল পুরুষ’। কবির ভাষায় তাঁর ‘নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া।’ তিনি আরো লিখেছেন ‘যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয়/জ্যোত্স্নার সারস।’ কেননা তিনিই যে বাংলাদেশের আরেক নাম। তিনি বাঙালি জাতির পিতা। মানুষ ভালোবেসে তাঁকে জন-উপাধি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু। এই নাম এখন সর্বদাই ‘স্বতোৎসারিত’। কবি মহাদেব সাহার কথাই ঠিক, ‘লিখি বা না লিখি শেখ মুজিব বাংলা ভাষায় প্রতিটি নতুন কবিতা।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘মুজিব গোলাপ হয়ে ফোটে, লাল পদ্ম হয়ে ফোটে হৃদয়ে হৃদয়ে।’ কেউ চাইলেই কি সেই হৃদয়কে অস্বীকারের উপায় আছে? তিনি যে রয়েছেন সর্বত্র।
তিনি তাঁর নান্দনিক নেতৃত্বের গুণে বাংলাদেশের ও বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মুক্তি ও উন্নয়নের সংগ্রামে ভরসার ছায়া হয়ে আছেন। সংগ্রামী এই রাজনৈতিক শিল্পীর ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয়ে আছে বাংলাদেশ নামক এক রঙিন মানচিত্র। এই শিল্পীর ক্যানভাসে লেপ্টে আছে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, মুক্তিসংগ্রাম ও দরদি নেতৃত্বের অসামান্য সব প্রতিচ্ছবি। একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। দেশটিকে কী করে সমৃদ্ধ ও জনবান্ধব করা যায় সেই অর্থনৈতিক মুক্তিসংগ্রামেও তিনি ছিলেন অবিচল। আর তাই অল্প সময়ের মধ্যেই একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছিল। ছিল খাদ্যাভাব। ছিল দারিদ্র্য। ছিল দুর্নীতি। কিন্তু তিনি পুরো সমাজের ও প্রশাসনের খোল-নলচে বদলে দেওয়ার আমূল সংস্কারবাদী সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। নয়া ব্যবস্থায় খাদ্যোৎপাদন বাড়ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম এবং পাশাপাশি তেল ও খাদ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। তাই খাদ্যসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম হয়ে উঠেছিল আকাশছোঁয়া। ঘাটতির অর্থনীতিতে চোরাকারবারি, মজুদদার ও দুর্নীতিবাজরা ছিল সক্রিয়। আর উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পাকিস্তানি নষ্ট কূটনীতিতে প্রভাবিত বিশ্ব মোড়লদের একাংশের খাদ্য সাহায্যকে ঘিরে চলছিল ভয়ংকর সব ভূরাজনৈতিক খেলা। তা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু ঘরে ও বাইরে সাহসের সঙ্গে তাঁর গণমুখী রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতি সচল রেখেছিলেন। বিচক্ষণ মুদ্রানীতি, ডিমনিটাইজেশন, খাদ্য ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে তাঁর শাসনামলের শেষ দিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।
তবে দলের ও দেশের ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা মীরজাফরদের শিরোমণি ছিলেন খন্দকার মোশতাক। এ ছাড়া অন্য বয়োজ্যষ্ঠ রাজনীতিকরাও বিপ্লবোত্তর একটি দেশের পুনর্নির্মাণে সহযোগিতার বদলে সর্বক্ষণ সমালোচনাই করছিলেন। অস্থির তরুণদের আরো অস্থির করে তুলছিলেন। আর আমলাতন্ত্র ও সামরিক বাহিনীর অন্দরমহলে তো চলছিল ষড়যন্ত্রের নানা কসরত। এমন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেও বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী রূপান্তরবাদী নেতৃত্বের গুণে দেশ দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন তিনি। কৃষি উন্নয়নের জন্য বীজ, সার ও ঋণ সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন দ্রুত। কৃষকদের ছাড়াও নগরের বেশির ভাগ মানুষের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দাঁড় করাতে তিনি ছিলেন খুবই তৎপর। প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ ছাড়াও গ্রামগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে অগ্রাধিকার দেন। আর নিজ নিজ ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার দিয়ে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার না করার নীতি গ্রহণ করেন। সমাজের ভেতরে সাম্প্রদায়িকতার কারণে যাতে শান্তি বিনষ্ট না হয় সে জন্যই তিনি এই উদারনীতি গ্রহণ করেছিলেন। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন সম্প্রতি এলএসইতে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বলেছেন যে শুধু এই নীতির কারণেই বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু হওয়ার অধিকার রাখেন। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও তিনি শিক্ষা কমিশন, ইউজিসি স্থাপনসহ অনেক সংস্কারধর্মী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষিতে ২৪ শতাংশ বিনিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষা খাতে ৭.১ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছিলেন। বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছিলেন। সব ধরনের অবকাঠামো পুনর্বাসনে অনেকটাই সফল হয়েছিলেন। সারা দুনিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে তিনি ছিলেন খুবই তৎপর।
আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে এ দেশেরই কিছু ক্ষমতালোভী কুসন্তান-পিশাচ বাঙালির মুক্তির এই মহানায়ককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ওরা ভেবেছিল এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে চিরদিনের জন্য তাঁকে মুছে ফেলা যাবে। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন আমাদের নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে। তিনি চিরজাগ্রত আমাদের গল্পে, কবিতায়, শিল্পীর তুলির আঁচড়ে। আছেন তিনি বাংলাদেশের অসংখ্য নদীর স্রোতোধারায়, পাখির ডাকে, রবীন্দ্রনাথের গানে, নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় আর বিশাল সবুজ প্রান্তরে। দিন দিন তিনি আরো বড় হচ্ছেন। বিরাট হচ্ছেন। ব্যাপক হচ্ছেন। তিনি আছেন, থাকবেন চিরদিন বাংলাদেশের এবং সারা বিশ্বের বঞ্চিত মানুষের স্বপ্নপূরণের ভরসার প্রতীক হিসেবে।
আর সে কারণেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এত আগ্রহ। আমার ধারণা, পৃথিবীর আর কোনো জাতির পিতা ও রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে এত কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লেখা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে এত লেখালেখি হয়েছে, যা এককথায় কল্পনাতীত। হয়তো কালের কষ্টিপাথরে এসব লেখার অনেকাংশই ঝরে পড়বে। তার পরও এ কথা ঠিক যে অনেক লেখাই কালোত্তীর্ণ হবে। হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা ও গবেষণানির্ভর লেখাগুলো নিশ্চয় যুগ যুগ ধরে পাঠকের মনে বাসা বাঁধবে। আমাদের সমাজের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ও পণ্ডিত যাঁরা, তাঁরা যদি একটু কষ্ট করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরো লেখেন, তাহলে তরুণ প্রজন্ম খুবই অনুপ্রাণিত হয়। আমরা যেন আমাদের বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহনেতাদের নিয়ে আরো নিবিড়ভাবে গবেষণা করি। মুক্তিযুদ্ধের মানুষ ও স্বপ্ন নিয়ে অনেক গভীর গবেষণার সুযোগ কিন্তু আমাদের আশপাশেই রয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিরল প্রজন্ম যত দিন বেঁচে আছে তত দিন তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে এ দেশের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিপুল সুযোগ রয়েছে। বলতে ভালো লাগছে যে ইউজিসি এরই মধ্যে সব উচ্চ শিক্ষালয়ে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোর্স চালু করেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর তারুণ্য ও শিক্ষাভাবনা নিয়ে দুটি বিস্তৃত গবেষণা পরিচালনারও উদ্যোগ নিয়েছে। এভাবেই সব উচ্চ শিক্ষালয়কে নিজেদের ইতিহাস ও নেতৃত্বকে জানার এবং বোঝার জন্য ব্যাপকভাবে গবেষণা ও প্রাণবান পাঠক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে।
নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর জীবন, তাঁর চিন্তা ও কর্ম তরুণ প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর থেকে শুরু করে কলকাতা ও ঢাকায় তাঁর ছাত্রজীবন এবং নেতৃত্বের ইতিহাস আমাদের তরুণদের উৎসাহিত করবে। তরুণ বয়সেই ভাষা-প্রশ্নকে রাজনৈতিক সংগ্রামের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন এটি দেশমাতৃকার প্রতি তাঁর একনিষ্ঠতার পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের বিরোধিতার জায়গা থেকে নিজ দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে তিনি উদার ধর্মনিরপেক্ষ প্রধানতম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। তাঁর এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাই পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে তিনি প্রতিফলিত করেছিলেন। শুরু থেকেই তাঁর এমন অসাম্প্রদায়িক অবস্থান আগামী প্রজন্মগুলোকেও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়তে উৎসাহিত করবে।
স্বাধীনতা-পূর্বকালে অর্থনীতি তথা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর গভীর চিন্তা এবং এ দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ও চাহিদার প্রতি বঙ্গবন্ধুর সংবেদনশীলতার সবচেয়ে বড় নিদর্শন তাঁর ছয় দফা কর্মসূচি। উন্নয়নের সুফল সবার কাছে, বিশেষত প্রান্তে থাকা নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দিতে না পারলে তা যে বৃথা হয়ে যায়, তা তিনি জানতেন। তাই অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণকে কেন্দ্রে রেখে ছয় দফা কর্মসূচি সামনে নিয়ে এসেছিলেন বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে। এই কর্মসূচি পুরো দলকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি পূর্ববাংলার শ্রমিক কৃষক-সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পায়। আজকের তরুণরাও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিয়ে ভাবার সময় ছয় দফার পেছনে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ও এটি বাস্তবায়নে তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তা থেকে উদ্বুদ্ধ হতে পারে।
ছয় দফার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্যই বঙ্গবন্ধু ১৯৭০-এ নির্বাচন করেছিলেন। জয়ী হয়ে খসড়া শাসনতন্ত্র তৈরির কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানিরা তা মেনে নিতে পারেনি। তাই বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। তার আগেই বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন আর সবাইকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। প্রকৃত অর্থেই গণমুখী নেতা ছিলেন বলেই তাঁর আহ্বানে দল-মত-ধর্ম-নির্বিশেষে পুরো জাতি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়।
স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু স্বভাবতই সবাইকে নিয়ে কল্যাণমুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের অভিযাত্রা যদি অপশক্তিগুলো থমকে না দিত, তাহলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম তা কল্পনা করাও কঠিন! তবু সান্ত্বনা এই যে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম শেষে ফের দেশ ফিরেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে। বিশ্ব মহামারি ও মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে সাহসের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে। চ্যালেঞ্জ প্রচুর সামনে। তবু আমরা এই কারণে আশাবাদী যে প্রতিকূল পরিবেশকে বাগে এনে এগিয়ে চলার সংস্কৃতিকে পাথেয় করে নিশ্চয় পৌঁছে যেতে পারব আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
বঙ্গবন্ধুর আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।