ঢাকা ০৪:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের জশনে জুলুছ পালিত। Logo সরকারি  ভাতার কার্ড দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ Logo অর্থনীতিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়লেও কমছে কর্মসংস্থান Logo সাইবার নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কপি পেস্ট: টিআইবি Logo চট্টগ্রাম কালুরঘাট অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন দুইশতাধিক যাত্রী Logo পুলিশ কমিশনার জনাব কৃষ্ণ পদ রায়,বায়েজিদ থানা দ্বি-বার্ষিক পরিদর্শন করেন। Logo শোক দিবসে জেলা প্রশাসনের র‌্যালি ও আলোচনা সভা Logo এম.ইউছুপ রেজা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের আহবায়ক নির্বাচিত Logo সমাবর্তনের জন্য ৫ বছরেও বরাদ্দ রাখেনি চবি Logo পটিয়ার নিমতলে ১০দিন ব্যাপী শোহাদায়ে কারবালা মাহফিলের ৮ম দিবস বুধবার
ই-পেপার দেখুন

বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার দিন আজ

আজ বঙ্গবন্ধুর ঢাবি’র ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার দিন।১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ বহিষ্কৃত হন।তখন তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন ।চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ঐ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তাকে এবং আরো চারজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নির্বাহী পরিষদ বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবারের মাধ্যমে মুচলেকা ও ১৫ টাকা জরিমানার বিনিময়ে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য চারজন ছিলেন কল্যাণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, নাঈমউদ্দিন আহমেদ, নাদেরা বেগম এবং আবদুল ওয়াদুদ ।এরা সবাই জরিমানা এবং মুচলেকা দিলেও বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সাথে আপোস করেন নি এবং ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নেননি। এ দিনটি বাংলার ইতিহাসের এক কলঙ্কিত দিন। ৬১ বছর পর ১৪ আগস্ট ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব বাতিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করে।কিন্তু আমার মতে এ সিদ্ধান্তেই এ কলঙ্কিত ইতিহাসের দায় শোধ হয় না। বাংলাদেশের রূপকার, স্থপতি, জাতির জনক, বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধুর জন্য এ সিদ্ধান্ত যথেষ্ট নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবন, ব্যক্তি জীবন, রাজনৈতিক জীবনের মতো তাঁর শিক্ষাজীবনও ইতিহাসবহুল ও অবিস্মরণীয়।

বঙ্গবন্ধু এক মহান শিক্ষার্থী। কারণ ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ যে শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়, সেই শিক্ষার্থীই ঠিক ২২ বছর পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ নিজ দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাই আমি এই মুজিব শতবর্ষে প্রস্তাব করছি, আহ্বান জানাচ্ছি যেন এ বছর থেকেই প্রতিবছর ১৪ আগস্ট এ মহান শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু স্মরণে তাঁর ঢাবি’র ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার দিনটি ‘জাতীয় শিক্ষার্থী দিবস’ (National Students Day) হিসেবে পালন করা হয়। তাহলে ওইদিন দেশের সকল শিক্ষার্থী বুঝতে পারবে এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য। যতদিন বাংলাদেশ রবে ততদিন প্রত্যেক শিক্ষার্থী এই ইতিহাস শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে লেখাপড়াকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থী হিসেবে লেখাপড়াকে যে গুরুত্ব দিয়েছেন তা তাঁর লেখা দুটি চিঠির দিকে তাকালে বোঝা যায়। ১৬ এপ্রিল ১৯৫৯ সালে ঢাকা জেল থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে চিঠি লিখলেন- “আমার কবে মুক্তি হবে তার কোন ঠিক নাই। তোমার একমাত্র কাজ হবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখানো। টাকার দরকার হলে আব্বাকে লিখিও। কিছু কিছু মাসে মাসে দিতে পারবেন। হাসিনাকে মন দিয়ে পড়তে বলিও। কামালের স্বাস্থ্য মোটেই ভালো হচ্ছেনা। ওকে নিয়মমতো খেতে বলিও। জামাল যেন মন দিয়ে পড়ে আর ছবি আঁকে। এবার একটা ছবি এঁকে যেন নিয়ে আসে আমি দেখব। রেহানা খুব দুষ্টু। ওকে কিছুদিন পর স্কুলে দিয়ে দিও জামালের সাথে। যদি সময় পাও নিজেও একটু লেখাপড়া করিও।” আরও একটি চিঠি ১৬ এপ্রিল ১৯৬৭ সালে তিনি লিখেন কারাগারে বসে। তিনি লিখেছেন- “কয়েকদিন পর্যন্ত মাথার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে স্যারিডন খাই। খাওয়ার পরে কিছু সময় ভাল থাকি। মাথার যন্ত্রণা হলে লেখাপড়া করতে পারিনা, লেখাপড়া না করলে সময় কাটাই কি করে!” এ দুটি চিঠি দেখলেই বোঝা যায় তাঁর কাছে ছিল শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু স্মরণে ১৪ আগস্ট “জাতীয় শিক্ষার্থী দিবস” (National Students Day) পালনের প্রস্তাব করছি। এই মুজিব শতবর্ষে বাঙালি জাতির জন্য এটাই হবে বড় প্রাপ্তি।

বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকালে আমার কাছে সমগ্র বাংলাদেশের ছবি ভেসে ওঠে। আবার বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। কারণ বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখনই বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকাই এবং চোখে চোখ রাখি তখনই মনে হয় বঙ্গবন্ধুর ওই চোখ কথা বলে এবং চোখগুলো জীবন্ত। মনে হয় বঙ্গবন্ধুর চোখ বলে-আমার দেশের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী,নবীন-প্রবীণ,সাধারণ মানুষ সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়বে। আমাদের বঙ্গবন্ধু সারাজীবন দেশের জন্য, এই বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য, অসহায়, শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, শ্রমিক, চাষী, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন,অন্ধকার কারাগারে থেকেছেন। তিনি ছিলেন বিশ্বনেতা। জীবনে ব্রিটিশ আমলে ৭ দিনসহ সর্বমোট ৪৬৮২ দিন কারাগারে বন্দী থেকেছেন। তিনি আপামর জনসাধারণের জন্য,বাংলার স্বাধীনতার জন্য ২২ বার গ্রেফতার হন ও ১৮ বার কারাবরণ করেন । ১৯৩৯ সালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার কারণে তাঁকে কারাভোগ করতে হয়। দেশের প্রয়োজনে প্রতিটা সংগ্রামে, আন্দোলনে,সকল গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ও মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে কারাগারেই তিনি অনশন শুরু করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা কর্মসূচী পালনের পরামর্শও দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ “বাংলাদেশ” তিনিই করেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের জ্বালাময়ী ভাষনে সমস্ত নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা যুদ্ধের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়। পরবর্তীতে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করে । মহান এই স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হন ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানি হয়। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁদের স্মরণ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি একই সাথে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ আপনার পরিবারের সকল শহীদদের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো (UNESCO)। বঙ্গবন্ধুর কাব্যিক কথামালার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক ম্যাগাজিন ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ তাঁকে ‘Poet of politics’ বা রাজনীতির কবি উপাধি দেয়। আমাদের বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বনেতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনি নিজেও এই বাংলার মানুষের জন্য অনেক ত্যাগ, জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যে দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করা হতো সেই বাংলাদেশকে আপনি জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া তিনটি সূচক (GNI, HAI & EVI) এর সবগুলো পূরণ করতে যোগ্য নেতৃত্ব দেন। যার ফলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘের তিনটি শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জীবনে অনেক সম্মাননা অর্জন করেছেন। ২০১০ সালে শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ২০১৩ সালে দারিদ্র দূরীকরণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ‘সাউথ সাউথ’ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে সমাজের নিগৃহীত জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সাউথ সাউথ কোঅপারেশন ভিশনারি’ অ্যাওয়ার্ড, নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় ‘প্ল্যানেট ফিফটি চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে ‘গ্লোবাল উইম্যান্স লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডসহ আরও নানা সম্মাননা অর্জন করেন। আপনি আল্লাহর রহমতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার যে বিরল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা সত্যি অবিস্মরণীয় ও অতুলনীয়। কোন অ্যাওয়ার্ড দিয়ে যা তুলনা করা যায়না। আপনি প্রতিনিয়ত দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই আমার দৃষ্টিতে আপনি- ‘HASINA THE HUMANITY, HASINA THE PROSPERITY’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবনে প্রথম আপনাকে লিখলাম। আপনাকে উপহারস্বরূপ দেবার মতো আমার কাছে কিছু নেই। তাই উপহারস্বরূপ হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত একটি উপাধি দিচ্ছি- ‘শান্তির মানসকন্যা’ (DAUGHTER OF PEACE)। আমার এ উপাধি আপনি গ্রহণ করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। পরিশেষে সবিনয়ে বলতে চাই-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যদি বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ১৪ আগস্ট ‘জাতীয় শিক্ষার্থী দিবস’ হিসেবে আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেন তাহলে আনন্দিত হবো।

ট্যাগস :

আপনার মতামত লিখুন

বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের জশনে জুলুছ পালিত।

বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার দিন আজ

আপডেট সময় ১১:১৪:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২১

আজ বঙ্গবন্ধুর ঢাবি’র ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার দিন।১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ বহিষ্কৃত হন।তখন তিনি আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন ।চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ঐ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তাকে এবং আরো চারজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নির্বাহী পরিষদ বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবারের মাধ্যমে মুচলেকা ও ১৫ টাকা জরিমানার বিনিময়ে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য চারজন ছিলেন কল্যাণ চন্দ্র দাশগুপ্ত, নাঈমউদ্দিন আহমেদ, নাদেরা বেগম এবং আবদুল ওয়াদুদ ।এরা সবাই জরিমানা এবং মুচলেকা দিলেও বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সাথে আপোস করেন নি এবং ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নেননি। এ দিনটি বাংলার ইতিহাসের এক কলঙ্কিত দিন। ৬১ বছর পর ১৪ আগস্ট ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব বাতিলের নির্দেশ প্রত্যাহার করে।কিন্তু আমার মতে এ সিদ্ধান্তেই এ কলঙ্কিত ইতিহাসের দায় শোধ হয় না। বাংলাদেশের রূপকার, স্থপতি, জাতির জনক, বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধুর জন্য এ সিদ্ধান্ত যথেষ্ট নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবন, ব্যক্তি জীবন, রাজনৈতিক জীবনের মতো তাঁর শিক্ষাজীবনও ইতিহাসবহুল ও অবিস্মরণীয়।

বঙ্গবন্ধু এক মহান শিক্ষার্থী। কারণ ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ যে শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়, সেই শিক্ষার্থীই ঠিক ২২ বছর পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ নিজ দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাই আমি এই মুজিব শতবর্ষে প্রস্তাব করছি, আহ্বান জানাচ্ছি যেন এ বছর থেকেই প্রতিবছর ১৪ আগস্ট এ মহান শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু স্মরণে তাঁর ঢাবি’র ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার দিনটি ‘জাতীয় শিক্ষার্থী দিবস’ (National Students Day) হিসেবে পালন করা হয়। তাহলে ওইদিন দেশের সকল শিক্ষার্থী বুঝতে পারবে এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য। যতদিন বাংলাদেশ রবে ততদিন প্রত্যেক শিক্ষার্থী এই ইতিহাস শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, দেশে লেখাপড়াকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থী হিসেবে লেখাপড়াকে যে গুরুত্ব দিয়েছেন তা তাঁর লেখা দুটি চিঠির দিকে তাকালে বোঝা যায়। ১৬ এপ্রিল ১৯৫৯ সালে ঢাকা জেল থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে চিঠি লিখলেন- “আমার কবে মুক্তি হবে তার কোন ঠিক নাই। তোমার একমাত্র কাজ হবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখানো। টাকার দরকার হলে আব্বাকে লিখিও। কিছু কিছু মাসে মাসে দিতে পারবেন। হাসিনাকে মন দিয়ে পড়তে বলিও। কামালের স্বাস্থ্য মোটেই ভালো হচ্ছেনা। ওকে নিয়মমতো খেতে বলিও। জামাল যেন মন দিয়ে পড়ে আর ছবি আঁকে। এবার একটা ছবি এঁকে যেন নিয়ে আসে আমি দেখব। রেহানা খুব দুষ্টু। ওকে কিছুদিন পর স্কুলে দিয়ে দিও জামালের সাথে। যদি সময় পাও নিজেও একটু লেখাপড়া করিও।” আরও একটি চিঠি ১৬ এপ্রিল ১৯৬৭ সালে তিনি লিখেন কারাগারে বসে। তিনি লিখেছেন- “কয়েকদিন পর্যন্ত মাথার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে স্যারিডন খাই। খাওয়ার পরে কিছু সময় ভাল থাকি। মাথার যন্ত্রণা হলে লেখাপড়া করতে পারিনা, লেখাপড়া না করলে সময় কাটাই কি করে!” এ দুটি চিঠি দেখলেই বোঝা যায় তাঁর কাছে ছিল শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু স্মরণে ১৪ আগস্ট “জাতীয় শিক্ষার্থী দিবস” (National Students Day) পালনের প্রস্তাব করছি। এই মুজিব শতবর্ষে বাঙালি জাতির জন্য এটাই হবে বড় প্রাপ্তি।

বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকালে আমার কাছে সমগ্র বাংলাদেশের ছবি ভেসে ওঠে। আবার বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমি বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। কারণ বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখনই বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে তাকাই এবং চোখে চোখ রাখি তখনই মনে হয় বঙ্গবন্ধুর ওই চোখ কথা বলে এবং চোখগুলো জীবন্ত। মনে হয় বঙ্গবন্ধুর চোখ বলে-আমার দেশের তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী,নবীন-প্রবীণ,সাধারণ মানুষ সবাই মিলে সোনার বাংলা গড়বে। আমাদের বঙ্গবন্ধু সারাজীবন দেশের জন্য, এই বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য, অসহায়, শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, শ্রমিক, চাষী, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন,অন্ধকার কারাগারে থেকেছেন। তিনি ছিলেন বিশ্বনেতা। জীবনে ব্রিটিশ আমলে ৭ দিনসহ সর্বমোট ৪৬৮২ দিন কারাগারে বন্দী থেকেছেন। তিনি আপামর জনসাধারণের জন্য,বাংলার স্বাধীনতার জন্য ২২ বার গ্রেফতার হন ও ১৮ বার কারাবরণ করেন । ১৯৩৯ সালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার কারণে তাঁকে কারাভোগ করতে হয়। দেশের প্রয়োজনে প্রতিটা সংগ্রামে, আন্দোলনে,সকল গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ও মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে কারাগারেই তিনি অনশন শুরু করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা কর্মসূচী পালনের পরামর্শও দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ “বাংলাদেশ” তিনিই করেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের জ্বালাময়ী ভাষনে সমস্ত নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা যুদ্ধের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়। পরবর্তীতে নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করে । মহান এই স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হন ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানি হয়। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁদের স্মরণ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি একই সাথে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ আপনার পরিবারের সকল শহীদদের প্রতি জানাচ্ছি বিনম্র শ্রদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো (UNESCO)। বঙ্গবন্ধুর কাব্যিক কথামালার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউজউইক ম্যাগাজিন ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ তাঁকে ‘Poet of politics’ বা রাজনীতির কবি উপাধি দেয়। আমাদের বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বনেতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনি নিজেও এই বাংলার মানুষের জন্য অনেক ত্যাগ, জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যে দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করা হতো সেই বাংলাদেশকে আপনি জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া তিনটি সূচক (GNI, HAI & EVI) এর সবগুলো পূরণ করতে যোগ্য নেতৃত্ব দেন। যার ফলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘের তিনটি শর্তই পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জীবনে অনেক সম্মাননা অর্জন করেছেন। ২০১০ সালে শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ২০১৩ সালে দারিদ্র দূরীকরণ ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ‘সাউথ সাউথ’ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে সমাজের নিগৃহীত জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র দূরীকরণে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘সাউথ সাউথ কোঅপারেশন ভিশনারি’ অ্যাওয়ার্ড, নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় ‘প্ল্যানেট ফিফটি চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে ‘গ্লোবাল উইম্যান্স লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডসহ আরও নানা সম্মাননা অর্জন করেন। আপনি আল্লাহর রহমতে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার যে বিরল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন তা সত্যি অবিস্মরণীয় ও অতুলনীয়। কোন অ্যাওয়ার্ড দিয়ে যা তুলনা করা যায়না। আপনি প্রতিনিয়ত দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই আমার দৃষ্টিতে আপনি- ‘HASINA THE HUMANITY, HASINA THE PROSPERITY’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবনে প্রথম আপনাকে লিখলাম। আপনাকে উপহারস্বরূপ দেবার মতো আমার কাছে কিছু নেই। তাই উপহারস্বরূপ হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত একটি উপাধি দিচ্ছি- ‘শান্তির মানসকন্যা’ (DAUGHTER OF PEACE)। আমার এ উপাধি আপনি গ্রহণ করলে কৃতজ্ঞ থাকবো। পরিশেষে সবিনয়ে বলতে চাই-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যদি বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ১৪ আগস্ট ‘জাতীয় শিক্ষার্থী দিবস’ হিসেবে আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেন তাহলে আনন্দিত হবো।