নাজমুল হোসেনের চোখে আনন্দাশ্রু। বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। খুশি নাজমুলের দিনমজুর বাবা নজরুল ইসলামও। তাদের বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার জয়পার্বতীপুর গ্রামে। নাজমুল জানায়, নিজেদের সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই। বাবা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন।
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের খিরসিন গ্রামের দরিদ্র কৃষক আব্দুস সালাম। সম্পদ বলতে শুধু ভিটেবাড়ি, এক ছটাক জমিও নেই। তার ছেলে জিহাদ আল নয়ন। মাকে হারিয়েছে ছোটবেলায়। পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দিয়েছে। ধাপে ধাপে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কনস্টেবল পদে মনোনীত হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকায় ছেলের পুলিশে চাকরি হওয়ায় আবেগাপ্লুত আব্দুস সালাম।
লাবনী রানী সাহা। বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার হাস্তাবসন্তপুর গ্রামে। বাবা লিটন চন্দ্র সাহা, মুদি দোকানের একজন কর্মচারী। তাদের আজ খুশির দিন। লাবনী রানী সাহা পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। মেয়ের চাকরি হওয়ার খুশিতে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি লিটন চন্দ্র সাহা। আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলেন, বিনা পয়সায় আমার মেয়ে চাকরি পেয়েছে। টাকা ছাড়া চাকরি হয়, এটি আজ দেখলাম।
শুধু নাজমুল, জিহাদ বা লাবনীই নয়, তাদের মত অনেক প্রান্তিক পরিবারের সদস্যই নিজের মেধা ও যোগ্যতা বলে কোন ধরনের অর্থ বা তদবির ছাড়াই বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। চাকরি পাওয়ার আনন্দে আবেগাপ্লুত অনেক প্রার্থী এবং তাদের পিতামাতা খুশিতে অশ্রুসজল হয়েছেন, তারা কোন কথাই বলতে পারেননি।
বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ৪ হাজার শূন্য পদের বিপরীতে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হয় চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি। আবেদনের শেষ দিন ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। মোট আবেদনকারী ছিল এক লক্ষ ৯৬ হাজার ৭২১ জন। হয় এর মধ্যে পুরুষ এক লক্ষ ৮০ হাজার ৭৪০ জন, নারী ১৫ হাজার ৯৮১ জন।
ওয়েববেইজড প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ, কাগজপত্র বাছাই ও ফিজিক্যাল অ্যান্ডুরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রাথমিকভাবে কনস্টেবল পদে ৪ হাজার প্রার্থী প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত প্রার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ওয়েববেইজড প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিংয়ে একটি এপ্লিকেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল এবং উচ্চতার ভিত্তিতে শূন্যপদের বিপরীতে ১:৩৫ অনুপাতে প্রাথমিকভাবে এক লক্ষ ১৫ হাজার ৬০৩ জন প্রার্থী বাছাই করা হয়। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৩৭ জন এবং নারী ১৪ হাজার ৬৬৬ জন।ফিজিক্যাল অ্যান্ডুরেন্স টেস্টে উত্তীর্ণ হয় ৩১ হাজার ৪০৫ জন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩১ হাজার ২৫৪ জন। এদের মধ্য থেকে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রাথমিকভাবে ৪ হাজার প্রার্থী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ক্রমে দীর্ঘ চার দশক পর বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগবিধি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত নিয়োগবিধিতে ইতোমধ্যে প্রথমবারের মতো ৩ হাজার প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে। এবার দ্বিতীয়বার সম্পূর্ণ মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে চার হাজার প্রার্থী নিয়োগ করা হলো।
বাংলাদেশ পুলিশে স্বচ্ছ ও আধুনিক প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ মেধা ও শারীরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে কনস্টেবল পদে প্রার্থী নিয়োগ ইতোমধ্যে সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জনগণকে উন্নত ও আধুনিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কনস্টেবল,
সাব-ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদে নিয়োগ বিধিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী সেরা প্রার্থীদের পুলিশে নিয়োগ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় আইজিপি বলেন, আমরা জব মার্কেট থেকে ‘বেস্ট অফ দি বেস্ট’ প্রার্থী বাছাই করতে সক্ষম হয়েছি। যারা মেধা এবং শারীরিক দিক থেকে অধিকতর যোগ্য। তারা জনগণকে আধুনিক ও উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম হবেন।